আমরা যে ভাবে দেখি মানুষকে......
মেয়েটা বাস ভাড়া দিতে ব্যাগ খোলার সাথে সাথে ব্যাগ থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা ঠুস করে পড়লো। আশে পাশের মানুষের ভ্রু কুচকে তাকালো। এক জন বলেই বসল
"কি যুগ আসলো রে বাবা!
মাইয়ারাও বিড়ি খায়"
কেউ জানেনা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়েটা ছোট ভাইকে সিগারেট খাওয়ার জন্য থাপ্পড় মেরে সিগারেটের প্যাকেটটা নিজের ব্যাগে রেখেছিলো। রাস্তায় ফেলতে ভুলে গিয়েছে।
**৪০ বছর বয়সী একটা লোক নাইটে এম বি এ ক্লাশ করতে আসে। আশে পাশে সবাই যুবক। একজন মন্তব্য করেই বসলো,
"আঙ্কেল গো লগে আজকাল ক্লাশ করন লাগে,
হায়রে কপাল!"
কেউ জানেনা লোকটার বাবা অনেক আগে মারা গিয়েছে। সংসারের হাল ধরার জন্য বড় ছেলে হিসেবে তাকে তখন পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিলো। এখন এই বয়সে সে আবার পড়ালেখা করতে আর্থিক দিক দিয়ে সক্ষম। তাই আবার পড়াশোনা শুরু করেছে। কারণ তার পড়তে ভালো লাগে।
** মহিলাটা লিপস্টিক লাগিয়ে পার্টিতে এসেছে। গতবছরই জোয়ান ছেলে রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। একজন মন্তব্য করে বসলো
"শখ কি রে বাবা। ছেলেটা মরছে একটু আল্লাহ খোদার নাম নিবে তা না …
এসে পড়ছে লিপস্টিক ঠোঁটে লাগিয়ে"
কেউ জানেনা। আজ মরে যাওয়া ছেলেটার জন্মদিন ছিলো। পার্টিতে আসার আগে মা তার ডায়েরি বুকে জড়িয়ে কান্না করে এসেছে। যেখানে লেখা ছিলো
"আমার মা খুব সুন্দর…
সাজলে মাকে অত্যন্ত সুন্দরী লাগে"
** ছেলেটা ফুল কিনে মেয়েটার হাতে দিচ্ছিলো। পাশ থেকে একজন বলে উঠলো
"মাম্মা ভালোই মানাইসে"
কেউ জানেই না মেয়েটা তার আপন বড় বোন। এবং মেয়েটার আজ চাকরির প্রোমোশন হয়েছে বলে ছোট ভাইয়ের সামর্থ্য অনুযায়ী ঐ ফুলটাই কেনা সম্ভব ছিলো।
** মেয়েটা বিবাহিতা। অনেক রাত যাবৎ সে ফেসবুকের অনলাইন। এটা দেখে একজন মন্তব্য করলো "বিবাহিত জীবনে সুখি না মেয়েটা।
"আমরা আছি তো সুখ দিতে"
অথচ কেউই জানেনা মেয়েটা রাত জেগে তার স্বামীর সাথেই ভিডিও কলে কথা বলছিলো। কারণ সে আজ তার মায়ের বাড়িতে এবং প্রাণপ্রিয় স্বামীকে দারুন মিস করছে।
** মেয়েটা ডিভোর্সি … আশ পাশের মানুষ এজন্য তাকেই দায়ী করে।
কেউ জানেই না কত রাত শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে মেয়েটা রাতে ঘুমাতে পারে নাই।
**ছেলেটা বন্ধুদের আড্ডায় খুব হাসিখুশি। গত সপ্তাহেই তার প্রেমিকার বিয়ে হয়েছে। একজন মন্তব্য করেই বসলো
"এত তাড়াতাড়ি ভুইলা গেলি মামা"?
কেউ জানেই না যেদিন তার প্রেমিকার বিয়ে হলো সেদিন থেকে সে এক রাতও শান্তিতে ঘুমায় নি। অনেক কেঁদেছে। মানুষের সামনে ভালো থাকার মিথ্যা অভিনয়ে সে জয়ী।
** মহিলাটা আজ অফিসে মাথায় কাপড় দিয়ে কান আর মুখের খানিকটা অংশ ঢেকে রেখেছে… একজন মন্তব্য করে বসলো
"হঠাৎ এত ভদ্র হইলো কেমনে?"
কেউ জানেই না ওড়নার নিচে গতরাতে স্বামীর হাতের মাইর গুলো নিষ্ঠুর ভাবে ভেসে আছে।
**ছেলেটা খুব শুকনা। একেবারে হেংলা। একজন মন্তব্য করলো
"নেশা টেশা করে মনে হয়"
অথচ কেউ জানেই না ছেলেটা ক্যান্সার নামক ভয়াবহ রোগে ভুগছে।
** মেয়েটার বিয়ে হয়েছে আজ ২ বছর। প্রাক্তন প্রেমিক মাঝে মাঝেই তার বাসার নিচে কয়েক দফা হেটে যায়। একদিন ম্যাসেজ করলো
"নিষ্ঠুর মেয়ে তুমি। কিভাবে ভুলে গেলা আমাকে?"
অথচ সে জানেই না ছেলেটার মা মেয়েটাকে আর তার বাবা মাকে ২ বছর আগে অপমান করে এসেছে। যার কারণে তার আজ আরেকজনের সংসার করা অবস্থায় প্রাক্তন কে জানালা থেকে দেখে চোখের দু ফোটা পানি ফেলে আর নিজের ঠোঁট কামড়ে সংসার করে।
**মেয়েটার প্রমোশন হয়েছে …সে খুব খুশি। তবে আশে পাশের মানুষ না। একজন মুখ ভেংচি কেটে বলল "বস এর সাথে খুব খাতির তো তাই প্রমোশন পাইসে" কেউ জানতো না মেয়েটা দিন রাত জেগে প্রোজেক্ট এর জন্য কি না করেছে।
**বিয়ের পর তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসছে না। একজন বলেই ফেলল
"ফিগার ঠিক রাখার জন্য বাচ্চা নিচ্ছে না"
কেউ জানেই না এই দম্পতি কত ডাক্তার ,কবিরাজ মানত করছে একটা বাচ্চার জন্য।
**অবৈধ সন্তান নষ্ট করতে ছেলে মেয়ে হাসপাতালে। ডাক্তার বললেন
" এবরশন গুনাহ" তারা উত্তর দিলেন "
টাকা দিচ্ছি কাজ করে দিন এত কথা আপনার মানায় না" কেউ জানেনা এই ডাক্তার মহিলার গর্ভে দীর্ঘ বছর যাবৎ একটা বাচ্চার আশা শুধু গর্ভপাত করতে আসা জুগল কে দেখে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।
____________________________
মূলকথা আমার কখন কখনো, কারো বাহির টা দেখে ভিতরটা বিচার করা অন্যায়। এই অন্যায় এ যারা সায় দেয় তারাও অন্যায় করছে। জরুরি নয় যে চোখে দেখা সব ঘটনা সত্য হবে। আড়ালের ঘটনা জানলে হয়ত আপনারও বুক ধুক করে উঠবে। আপনাকে ধন্যবাদ কষ্টো লিখাটি পড়ারো জন্য।
সোর্স :- ইন্টারনেট :)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন